
নিউজ ডেস্ক::
চলতি নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবিশ কুমার গতকাল বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন শুরুর উদ্যোগকে শুভ সূচনা হিসেবে অভিহিত করেছেন। এর আগে বুধবার জাতিসংঘ বলেছে, রোহিঙ্গাদের ফেরার পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি।
এদিকে রোহিঙ্গা গণহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমারকে তার মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর জন্য চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তারা বলেছে, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে মিয়ানমার ইইউয়ের বাজারে বাণিজ্য সুবিধা হারাবে। ইউরোপের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল মিয়ানমারে চার দিনের সফর শেষে বুধবার রাতে ওই হুঁশিয়ারি দেয়।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রসচিবদের নেতৃত্বে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গত মঙ্গলবার বৈঠক শেষে চলতি নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর ঘোষণা দেয়। এ সিদ্ধান্তে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো অসন্তুষ্টি জানালেও স্বাগত জানিয়ে প্রথম বিবৃতি দিয়েছে ভারত। নয়াদিল্লিতে গতকাল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করার ব্যাপারে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে ভারতের অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। জবাবে মুখপাত্র রবিশ কুমার বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের এ সিদ্ধান্তকে ভারত স্বাগত জানায়। ভারত আশা করে, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়া শুরুর মধ্য দিয়ে এ প্রক্রিয়ায় একটি গতি আসবে এবং রোহিঙ্গাদের মধ্যেও আস্থা ফিরবে। তিনি বলেন, বাস্তুচ্যুত হয়ে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদ, দ্রুত ও টেকসই প্রত্যাবাসনকে ভারত সমর্থন করে। ভারত এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার—দুই দেশের সঙ্গেই কাজ করছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘আশ্রিতদের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে ভারত। অন্যদিকে ভারত মিয়ানমারে ওই ব্যক্তিদের ফিরে যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়তা করছে। ওই ব্যক্তিরা ফিরে যাওয়ার মতো অনুকূল আর্থ-সামাজিক পরিবেশ যেন পায় সে জন্য ভারত কাজ করছে।’
এদিকে ইউরোপের ২৮টি দেশের জোট ইইউয়ের বাণিজ্য নীতিবিষয়ক প্রধান ও ইইউ বাণিজ্য কমিশনার সিসিলিয়া ম্যালস্ট্রম গতকাল বৃহস্পতিবার এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘ইইউয়ের একটি পর্যবেক্ষক মিশন গত সপ্তাহে মিয়ানমার সফর করেছে। এখন আমরা আশা করব, ওই মিশন যে গুরুতর ঘাটতির (মানবাধিকার ও শ্রম পরিস্থিতি) বিষয়টি চিহ্নিত করেছে মিয়ানমার তা পূরণ করবে।’
ব্রাসেলসে বুধবার রাতে ইইউয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে ইইউ মিশনের মিয়ানমারে মানবাধিকার ও শ্রম পরিস্থিতি মূল্যায়ন করার কথা বলা হয়েছে। জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে মিয়ানমারের রাখাইন, শান ও কাচিন রাজ্যে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের তথ্য ওঠে আসার পর ইইউয়ের পররাষ্ট্র বিভাগ ও ইউরোপীয় কমিশনের একটি বিশেষজ্ঞ দল গত ২৮ থেকে ৩১ অক্টোবর ওই দেশ সফর করে। সফরের পর ইইউয়ের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে বলা হয়েছে, মিয়ানমার জাতিসংঘ ও আইএলওর ১৫টি মৌলিক সনদ মেনে চলার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ। ‘এভরিথিং বাট আর্মস’ (অস্ত্র ছাড়া সব কিছু) ব্যবস্থার আওতায় মিয়ানমার ইইউয়ের বাজারে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধায় পণ্য রপ্তানির সুযোগ পাচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে এ সুবিধা পেতে চাইলে মিয়ানমারকে অবশ্যই ওই ১৫টি মৌলিক সনদে উল্লিখিত নীতিগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং সেগুলো সমুন্নত রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে ইইউয়ের বাজারে মিয়ানমারের বাণিজ্য সুবিধা প্রত্যাহারের সুস্পষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
ইইউয়ের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মিয়ানমার থেকে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধায় ইইউয়ে রপ্তানির পরিমাণ গত বছর ১৩০ কোটি ইউরোতে উন্নীত হয়েছে। ২০১৫ সালে এর পরিমাণ ছিল সাড়ে ৫৩ কোটি ইউরো। ২০১৭ সালে ইইউয়ের বাজারে মিয়ানমারের রপ্তানি পণ্যের ৭২ শতাংশের বেশি ছিল পোশাকপণ্য। মিয়ানমারের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য হলো ইইউ। ২০১৭ সালে ওই দেশটির ৮.৮ শতাংশ পণ্য ইইউয়ে গেছে। আইনের শাসন ও মানবাধিকারের নাজুক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ইইউ মিয়ানমারকে পরিস্থিতির উন্নতির জন্য সতর্ক করে আসছে।
পাঠকের মতামত